‘মহাদুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট’র আলাদিনের চেরাগ’র দৈত্য’ গণপূর্তের সোহরাওয়ার্দী

‘মহাদুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট’র আলাদিনের চেরাগ’র দৈত্য’ গণপূর্তের সোহরাওয়ার্দী

সিনিয়র রিপোর্টারঃ

আলোচিত ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেফতার হওয়া গোলাম কিবরিয়া শামীম (জিকে শামিম) এবং গোল্ডেন মনির, দু’জনই বর্তমানে জেলে৷ কিন্তু এই দুই বিতর্কিত ব্যাক্তির গ্রেফতারের পর কিছুটা হোচট খেলেও, আবারও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্হ প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তরের একছত্র নিয়ন্ত্রণ নিজের মুষ্টিবদ্ধ করেছেন তাদের সিন্ডেকেটের অন্যতম প্রধান সদস্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দী।

প্রবল পরাক্রমশালী এবং অত্যন্ত ধূর্ত মহা-দুর্নীতিবাজ এই সরকারি চাকুরে তার মনিবদের (জিকে শামিম ও গোল্ডেন মনির) জেলে বসে দেওয়া নির্দেশনা, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ এবং ম্যানেজ করার কৌশল অনুসরণ-ব্যবহার করে নিজের বিরুদ্ধে থাকা দুদকের মামলা থেকে খালাস তো নিয়েছেন বটেই, একইসঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের দুর্ভেদ্য সিন্ডিকেট। শুধু তাই নয় প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌড়ে এরই মধ্যে নিজেকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। নিজের পদ-পদবী ধরে রাখতে এবং অপকর্মসমূহ লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে তিনি নানা ধরণের কৌশল অবলম্বন করেন। টেন্ডার, বদলি বানিজ্য এবং বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় নয় ছয়ের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল অংকের অবৈধ অর্থ’র ছোট একটি অংশ ব্যয় করেন মুখ বন্ধ রাখা থেকে শুরু সবদিক ম্যানেজ করতে।

এরই মধ্যে ২০২০ সালে তার এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বেশীরভাগকেই অন্যত্র বদলি তো করিয়েছেনই, পাশাপাশি নিজের আস্থাভাজন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে এসে বসিয়েছেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন জোন, ই/এম জোনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জোন ও বিভাগের পদগুলোয়।

তার অপকর্মের বিরোধীতাকারী ঠিকাদার এবং ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোহরাওয়ার্দীর ক্ষমতার দাপট অনেক। তার রয়েছে অঢেল কালো টাকা। একই সঙ্গে তার রয়েছে গুন্ডা বাহিনী থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নানা বিভাগের লোকজন।

এখন আসা যাক এ কে এম সোহরাওয়ার্দীর পরিচয়পর্বে। ছাত্র জীবনে শিবির করা সোহরাওয়ার্দী বিএনপি-জামাত জোটের শাসনামলে বর্তমান সরকারি দলের অনুসারী সরকারি চাকুরে এবং ঠিকাদারদের প্রতি নানা ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করেছেন।সোহরাওয়ার্দী বর্তমানে জি কে শামীম ও গোল্ডেন মনির’র সিন্ডিকেটের সবচাইতে আজ্ঞাবহ সহচর।

এই বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন বলেন, ওনারা (জিকে শামিম, গোল্ডেন মনির) জেলে থাকলে কি হবে, সোহরাওয়ার্দী সাহেব তো আছেনই তাদের এবং নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য। আপনি বুঝেন না দুর্নীতি দমন কমিশনে সব প্রমাণাদি দিয়ে মামলা করার পরও, ভিভিআইপিদের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে সোহরাওয়ার্দী সাহেব খালাস পেলেন! এখন তো এনাদের ক্ষমতার গরমে আমরা কেউ কথা তো দূরে থাক, পিন ফেলার শব্দও করতে পারি না। টেন্ডার, নিয়োগ, ক্রয়, বদলি সব তার হাতে। পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলীও হচ্ছেন তিনি। এর জন্য ইতোমধ্যে বিপুল অর্থ খরচের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন নানা ধরণের লবিংও।

এছাড়া, সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সখ্যতা ছিল মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেয়া, ফাইল গায়েব করে টাকা চাওয়াসহ অনেক অভিযোগের প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার হোসেনের। তাকে দিয়ে তিনি করিয়ে নিয়েছেন অনেক কাজও। সোহরাওয়ার্দীর আরও রয়েছে কয়েকজন প্রভাবশালী নির্বাহী প্রকৌশলীর এক দূর্ভেদ্য সিন্ডিকেট। যাদের দিয়ে তিনি পর্দার আড়ালে থেকে হাসিল করে নেন নিজের সব কাজ। আর অবৈধভাবে আয়কৃত এই টাকা দিয়ে তিনি গড়েছেন বিপুল সম্পদ। তবে সেগুলোর বেশীরভাগই নিজের নামে নয়। এর মধ্যে বেশ কিছু পাচার হয়েছে বিদেশেও।

এই প্রসঙ্গে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে এবং সশরীরে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়।

বিগত অর্থবছরের এপিপিতে নয়-ছয়ের বিস্তারিত, বদলি বানিজ্যের চিত্র, জিকে শামিম ও গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রাখা, প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার তৎপরতা, অবৈধভাবে নিজের আস্থাভাজনদের দিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া, কমিশন আদায় করে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক বনার বিস্তারিত আগামী পর্বে তুলে ধরা হবে।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *