এবার মিলল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাসুদ’র দুর্নীতির খোঁজ

এবার মিলল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাসুদ’র দুর্নীতির খোঁজ

সিনিয়র রিপোর্টারঃ

দেখতে আপাদ মস্তক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী পরহেজগার ব্যাক্তি। দাড়ি, টুপি সবই আছে। চাকরিও করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে। স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। প্রতিদিন সকালে অফিস যান এবং এরপর কাজ শেষে বাসায় ফিরেন। বলছি ধর্ম মন্ত্রণালয় অধীনস্থ ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের আইসিটি ও ইসলামিক এনসাইক্লোপিডিয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ মোল্লা’র কথা।

প্রথম দর্শনে কেউ ধারণাই করতে পারবেন না যে তার এই সহজ-সরল সাধারণ চলাচলের পেছনে রয়েছে এক ধরি মাছ না ছুঁই পানি ধরণের দুর্নীতির এক লম্বা গল্প।

পরিবার পরিজন নিয়ে পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের বিউটি বোর্ডিংয় সংলগ্ন ৩১/২ শিরিস দাস লেনে ভাড়া থাকেন তিনি। বাসা ভাড়া দেন ২৫ হাজার টাকা৷ এরপর সার্ভিস চার্জ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল। তার বড় ছেলে পড়াশোনা করে নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেঝ মেয়ে একটি বেসরকারি কলেজে। আর সবার ছোট মেয়ে মাদ্রাসায়।

এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। খটকা বাধে যখন দেখা যায় যে দ্রব্যমূল্যের এই দুর্বিষহ একেবারেই ভ্রুক্ষেপহীনভাবে দিব্যি চলছেন তিনি। সামান্য এই সন্দেহ থেকে অনুসন্ধান চালান এই প্রতিবেদক। আর বেরিয়ে আসে তার আসল চেহারা।

এই সরকারি চাকুরে আর ক’দিন পরেই যাবেন অবসরে। কিন্তু চাকরির এত বছরে যা ঘটানোর তা ঘটিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন তদবির, বদলি বানিজ্যের মাধ্যমে পকেটে পুরেছেন কোটি কোটি টাকা৷ শুধুমাত্র বেতনভুক্ত একজন কর্মকর্তা’র ঢাকা শহরে কয়েকটি ফ্ল্যাট, জমি তার প্রমাণই বটে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরান ঢাকার কলতা বাজারের কাজী আবদুর রউফ রোড’র ১৩/এ বিল্ডিংয়ে তার রয়েছে ২টি ফ্ল্যাট। তবে তা অবশ্য রেখেছেন নিজ স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা’র নামে। এছাড়া রাজিয়া সুলতানা’র নামে রয়েছে রায়েরবাগে জমি। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে পৈতৃক সম্পত্তির বাহিরেও কিনেছেন বড় মাপের দামি জমি। পৈতৃক বাড়িতেও তিনি আলিশান প্রাসাদতূল্য বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। যদিও সেটি সাময়িকভাবে লোকচক্ষু থেকে আড়াল করতে বন্ধ রেখেছেন।

অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার আগেই এই বিপুল সম্পদের উৎস প্রসঙ্গে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া একেবারেই অমূলক নয়। তবে আরেকটু যাচাই বাছাই করার জন্যে আরেকটু গভীরে যেতে হবে। প্রতিবেদকের কথা হয় তার দপ্তরের একাধীক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সঙ্গে।

তারা জানান, মাসুদ সাহেব এমনিতে ভালো লোক। তবে তাকে যখনই কোন তদন্ত, বদলি কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয় তখনই তিনি হাত সাফাইয়ের কাজটি সেরে নেন। নাহলে বুঝেন না কেন, তার স্ত্রী একজন নেহাৎ গৃহিণী এতো টাকা পাবে কোথা থেকে! উনি (মাসুদ) খান (ঘুষ) তবে মাত্রাতিরিক্ত না আবার একেবারে কমও না। ওনার স্টাইল অনেক ভিন্ন।

এই প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল মাসুদ মোল্লা’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, প্রথমেই তিনি বিব্রত হয়ে পড়েন। এরপর বলেন সম্পত্তি তার স্ত্রী’র নামে।

‘আপনার স্ত্রী তো একজন গৃহিণী, তিনি এতো টাকা কোথায় পেলেন’ এমন প্রশ্ন করা হলে, তিনি সাংবাদিক পাড়ায় অনেক পরিচিতি আছে জানিয়ে বলেন, আপনার এতো মাথা ব্যাথা কেন? আপনি আসেন। আর আমার এই প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য নেই। যা পারেন করেন।

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *