অবশিষ্ট নেই কোন সোনা, জড়িতরা শনাক্ত

অবশিষ্ট নেই কোন সোনা, জড়িতরা শনাক্ত

 

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউসের ভল্ট থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ একদিনে নয় বরং যোগসাজশে লম্বা সময় ধরে ধাপে ধাপে অল্প অল্প করে বের করা হয় এবং পরবর্তীতে সেগুলো তাঁতীবাজার, পল্টন এবং বায়তুল মোকাররমের বেশ কতগুলো স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে বিক্রি করা হয়। এই বিক্রির কাজটাও করা হয় ধাপে ধাপেই। সোনা চুরির ঘটনায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও সিপাহিদের সঙ্গে আর কাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, ক্রেতা কে কে ছিলেন, আর স্বর্ণ বাকী আছে কিনা, এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সোনা চুরির ঘটনায় টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। পরে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) এই মামলা দায়ের হয়। সেটির তদন্তভার পড়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তরা বিভাগের উপর।

এই বিষয়ে ব্রেকিং নিউজের সঙ্গে আলাপ হয় গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তরা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার খন্দকার নুরন্নবীর সঙ্গে।

তিনি জানান, প্রায় ছাপ্পান্ন কেজি স্বর্ণ। এটা অনেক বড় ব্যাপার। এগুলো একদিনে নয়, বরং লম্বা সময় ধরে ধাপে ধাপে বের করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ভেদ করে ঊর্ধ্বতন কোন কোন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততায় এসব স্বর্ণ সরানো হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। অনেকে শনাক্তও হয়েছেন। তাঁতীবাজার ও বায়তুল মোকাররম ব্যতীত অন্য জায়গায় স্বর্ণ বিক্রি করা হয়েছে কি না, সেসব বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কারণ সন্দেহভাজন সবাই প্রচুর বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। মিথ্যা বলছেন।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদার পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে গোডাউন থেকে স্বর্ণ সরিয়েছেন। তাদের সঙ্গে স্বর্ণ বেচাকেনার ব্যক্তিদের যোগাযোগ রয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কাস্টমসের কর্মকর্তাদের আর কোন কোন স্তরের কর্মকর্তারা জড়িত, এসব বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসূত্র ছাড়া স্বর্ণ সরানো সম্ভব নয়। মামলার এজাহারে গত ২ সেপ্টেম্বর গোডাউন থেকে চুরির ঘটনার উল্লেখ করা থাকলেও তার আগের এক-দুই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ কাস্টমসের কাছে চাওয়া হলেও সরবরাহ করতে পারেনি।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন ডিবি কর্মকর্তা ব্রেকিং নিউজকে বলেন, মামলার এজাহারে অনুসারে ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গোডাউনে স্বর্ণ রাখা ছিল। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে জব্দ করার তিন দিন পরই জব্দকৃত স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে পারে। ২০২০ সালের জব্দ করা স্বর্ণগুলো কী কারণে গোডাউনে সংরক্ষিত ছিল, এটাও একটা বড় প্রশ্ন। কাস্টমসের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন ছাড়া অন্য কেউ সেই গোডাউনের আশপাশে যেতে পারতো না।

এই বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার আকরাম হোসেন ব্রেকিং নিউজকে বলেন, গোডাউনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ভেদ করে কোন প্রক্রিয়ায়, কার সহযোগিতায়, কীভাবে স্বর্ণ সরানো হয়েছে, এবং কোথায় কোথায় বিক্রি করা হয়েছে, সেই বিষয়ে চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আমাদের ধারণা যেহেতু ধাপে ধাপে তারা সোনা বের করেছে, তাই তারা সবটুকুই বিক্রি করে দিয়েছে। কারণ এখন অব্দি কোন সোনা উদ্ধার করা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমসের গোডাউন থেকে স্বর্ণ চুরি ঘটনাটি আলোচনায় আসে। পরদিন এই অভিযোগে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি চুরির মামলা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

 

editor

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *