স্টাফ রিপোর্টারঃ
ইরাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাংলাদেশি যুবক মোসলেম মোল্লাকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাদেরকে বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার (২৯ আগস্ট) সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
তিনি বলেন, মোসলেম মোল্লা ২০১৬ সালে জীবিকার তাগিদে ইরাক পাড়ি জমান। ইরাকে অবস্থানকালে সেলিম মিয়া ও শামীমসহ আরো কয়েকজন মোসলেমকে কাজের কথা বলে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকে অন্যত্র অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়ে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে, অন্যথায় তাকে হত্যা করবে বলে হুমকিও দেয়। এ ঘটনার পর খতেজা বেগম তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য নবাবগঞ্জ থানার পাড়াগ্রাম বাজার থেকে ১২টি বিকাশ নাম্বারে ৬ লাখ টাকা দেন। পরবর্তীতে আসামিরা ভুক্তভোগী যুবককে মুক্তি না দিয়ে আবারও তার মায়ের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে। এই ঘটনায় খতেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
এরপর ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেফতার করে পিবিআই। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, ৬ অক্টোবর, ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ও ২৩ আগস্ট বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে গ্রেফতার হয় আটজন। গ্রেফতাররা হলো-আলী হোসেন (৪৯), মো. শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), রবিউল ঘরামী (২৪), শাহিদা বেগম (৫২), সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮), মো. আকবর সরদার (৫৫)।
পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ইরাকে অবস্থানকালে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি সেলিম মিয়া নামের একজনের সঙ্গে ভুক্তভোগী মোসলেমের পরিচয় হয়। সেলিম মোসলেমকে ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বিরের হাতে তুলে দেয়। মোসলেমকে নিয়ে গিয়ে আসামিরা একটি আবদ্ধ রুমে আটকে রাখে এবং তার সঙ্গে থাকা ২ হাজার ডলার ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নির্যাতন করতে থাকে।
তিনি বলেন, ৩ দিন ধরে নির্মম, বর্বর নির্যাতনের পর সেই নির্যাতনের দৃশ্য ইমো অ্যাপের মাধ্যমে খতেজা বেগমকে দেখায় এবং মোট ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
খতেজা বেগম ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আসামিদের পাঠানো ১২টি বিকাশ নাম্বারে ২৬টি ট্রাঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোট ছয় লাখ টাকা দেন। আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বির ইরাকে অবস্থান করলেও দেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও নিজেদের বিকাশ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউট করে নেয়।

